আল্লাহ যে ৭ ধরনের মানুষকে খুব পছন্দ করেন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ, Extraordianary এর পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম।আজ আমরা জানতে চলেছি মানুষের কোন ৭ টি গুন আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন। যদিও এটি একটি কমন বিষয়,কিন্তু আমি খেয়াল করলাম যে ,মানুষ এ বিষয়গুলোকে একটু ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করে ।অথবা ভুল বোঝেন। তাই প্রত্যেকটি টপিক খুলাসা করে আলোচনা করা হলো।
আমরা প্রতিনিয়ত আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করি। এমন সব গুণাবলি আমাদের ধারণ করা উচিত , জেগুলো আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন। কেননা তার ভালোবাসার বদৌলতেই আমরা সফলতা ও নিয়ামত লাভ করতে পারব। তাই এই পোষ্ট এ সংক্ষেপে ৭ টি মানবিক গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো। জেগুলো আল্লাহ তায়ালা নিজেও অত্যাধিক ভালোবাসেন। তা হলো;
১. ধৈর্য ঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন, "আর যারা সবর করে ,আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।"(সুরা আলে ইমরানঃ১৪৬)
ধৈর্যের অনেকগুলো রুপ রয়েছে ।তার মধ্যে অন্যতম হলো ;
প্রতিকুল অবস্থায় ধৈর্য ধারণঃ কোন ব্যাক্তি কোন বাজে অবস্থায় পড়লেই তার অভিযোগ করা বা হতাশ হওয়া উচিত নয়। বরং তার উচিত আল্লাহর ফয়সালা কে মেনে নেওয়া এবং কঠিন ও প্রতিকুল পরিস্থিতিকে সবরের মাধ্যমে মোকাবেলা করা।
আল্লাহর হুকুম পালনে ধৈর্য ধারণঃ নামায পড়ার সময় ,রোজা পালনের সময় তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। অস্থিরতাও কাম্য নয়। ঠিক একই ভাবে যাকাত আদায় করা বা হজ পালনের সময় ও মাথা ঠান্ডা রাখা খুব প্রয়োজন। এভাবে প্রতিটি ইবাদতের সময়ই অস্থিরতা, উত্তেজনা ও তাড়াহুড়োকে পরিহার করে বরং ধৈর্য ধারণে তৎপর হওয়া দরকার।
পাপ থেকে বিরত থাকতেও ধৈর্য প্রয়োজনঃ মদ,জুয়া ,জেনা করা ,টিভি দেখা সহ নানাবিধ পাপাচার কিংবা অন্য অনেক খারাপ ও নিষিদ্ধ কাজ করার সুযোগ আমাদের সামনে আসবে। এগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখার জন্য ধৈর্য প্রয়োজন।
২. অনুতপ্ত হওয়া, তওবা করাঃ "নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তওবাকারী ও অপবিত্রতা থেকে যারা বেচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন।"( সূরা আল বাকারাঃ২২২)
আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দাদেরকে ভালোবাসেন যারা অনুসুচনায় ভোগে এবং যারা নিয়মিত তওবা করে। ভুল করেও যারা অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করে তারাই আল্লাহর পছন্দের বান্দা। কেননা আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল এবং তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। কে কতবার অন্যায় করল ,কার পাপের গভীরতা কতটুকু আল্লাহ তায়ালা তা বিবেচনা করেন না । বান্দা যদি গোনাহ করার পর অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিকট একনিষ্ঠতার সাথে ফিরে আসে ,তাহলেই আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেন।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৫০টি উপদেশ আপনাকে জ্ঞানী করে দিবে!!
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যদি কেউ একটি গুনাহ করে এবং তারপর আল্লাহ তায়ালার কাছে বলে ,হে আমার খোদা আমি পাপ করেছি ,আমায় মাফ করে দাও তাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন আমার বান্দা এতটুকু অন্তত জানে যে, একজন খোদা আছে যে গোনাহ মাফ করে আর মাফ না চাইলে গোনাহের জন্য শাস্তি দেয়। যেহেতু সে তার রবের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ,তাই আমি তাকে মাফ করে দিলাম।'(সহিহ বুখারী)
৩.আল্লাহ তায়ালা সৎ কর্মশীলদেরকে ভালোবাসেনঃ সততা এবং নিজের ভালো কাজগুলোকে নিখুত করা, "যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে ,যারা নিজেদের রাগকে সংবরন করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে ।বস্তত আল্লাহ তায়ালা সৎ কর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন।"( সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৪)
বর্ণীত আয়াতে আমরা ৪ টি কাজের সন্ধান পায়। যেগুলো আল্লাহ পাক খুবই পছন্দ করেন। এগুলো হলো;
ক.অনুকূল সময়ে আল্লহর রাস্তায় ব্যয় করা
খ.প্রতিকূল অবস্থাতেও আল্লহর পথে ব্যয় করা
গ.রাগ দমন করাঃএকবার হযরত সুফুয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ আল সাকাফী (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন কিছু বলুন ,জার দ্বারা আমি উপকৃত হবো । যা আমাকে আরো বেশি কার্যকর ও শক্তিশালী করে তুলবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) উত্তর দিলেন, রেগে যেও না। তাহলেই তুমি জান্নাতে যাওয়ার পথ খুজে পাবে । (আল তাবারা)
ঘ.মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়াঃ আমরা মানুষের ভুল ত্রুটি গুলোকে অগ্রাহ্য করার মাধ্যমে মানুষকে ক্ষমা করতে পারি । ক্ষমা করা পরোক্ষভাবে রাগ দমনের সাথে সম্পৃক্ত । রাগ সংযত করা উত্তম। তার চেয়েও উত্তম হলো, মানুষকে ক্ষমা করা এবং তার জন্য কল্যান কামনা করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সবচেয়ে উত্তম হলো তারাই যারা মানুষের জন্য উপকারী ও কল্যাণকামী। (আল মুজাম আল আওস)
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ১০০টি ইসলামিক নাম ও তার বাংলা অর্থ. Meyeder Islamic Name
৪. বিশুদ্ধতাঃ "নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে বেশি ভালোবাসেন যারা নিয়মিত ভাবে তওবা করে এবং নিজেদেরকে বিশুদ্ধ রাখার চেষ্টা করে । "( সূরা আল বাকারাঃ ২২২)
আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দাকে বেশি পছন্দ করেন, জিনি অপবিত্র বা খারাপ কোন বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে। যিনি বড় ও ছট সব ধরণের গুনাহ থেকে নিজেকে পবিত্র রাখেন ।নিজেকে শুদ্ধ রাখার আরেকটি উপায় হলো শিরক ও অন্যান্য পাপ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
৫. ন্যায়নিষ্ঠতা ও তাকওয়াঃ "অবশ্যয় আল্লাহ সাবধানীদের ও ন্যায়নিষ্ঠ বান্দাদেরকে পছন্দ করেন। "( সূরা তাওবাঃ ৪)
এই গুন্টিকে আমরা কখনও খোদাভীরুতা ,কখনও পুন্যময় কাজ হিসেবে অভিহিত করি।
তাকওয়া হলোঃ সেই মানবিক গুনাবলি ,যা বান্দাকে আল্লাহর পছন্দনীয় কাজ করতে এবং অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে উদ্বুদ্ধ করে। তাকওয়া এভাবেই মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করে।
৬.আল্লাহর উপর ভরসা রাখাঃ "অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে ফেলেন ,তখন আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করুন। আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদের ভালোবাসেন।"(সূরা আল ইমরানঃ ১৫৯)
হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত ,রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তোমরা যদি আল্লাহর উপর সঠিকভাবে ভরসা রাখতে পারো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে সেভাবেই তার প্রতিদান দেবেন, যেভাবে তিনি সেই পাখিটিকে প্রদান করেন। যে সকালবেলা খালিমুখে বেড়িয়ে যায় আর সন্ধ্যায় ভরা খাবার নিয়ে নীড়ে ফিরে আসে ।'(তিরমিজি)
আরো পড়ুনঃ ৪৫টি শিরক! যা আমরা না জেনে নিয়মিত করে থাকি!!
৭. ন্যায়বিচারঃ "যদি ফায়সালা করেন, তবে ন্যায়নিষ্ঠভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন।"(সুরা আল মায়েদাঃ ৪২)
ইসলাম সবার প্রতি সুবিচার করার তাগিদ দিয়েছেন। মুসলিম অমুসলিম কেউ যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয় ,ইসলাম তা নিশ্চিত করেছে। ধর্ম, বর্ণ ,গোত্র, লিঙ্গ , জাতী নির্বিশেষে সকলেরই ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে ।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উল্লেখিত বিষয়গুলোর উপর আমল করার তৌফিক দান করুন ।আমিন।
Comments
Post a Comment