রাসুল সাঃ-এর ১৬টি সুন্নত! ও এর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ, Extraordianary এর পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম।আজ আমরা রাসুল (সা.) -এর ১৬টি সুন্নত !ও এর বৈজ্ঞানিক উপকারিতা জানবো । আজকের এই আলোচনায় মহানবী (সা.) -এর সুস্বাস্থ্যের কিছু বরকতময় অভ্যাস উল্লেখ করা হবে যা দেখে আধুমিক চিকিৎসা বিজ্ঞানিরা বলেছেন যে ,দেড় হাজার বছর পূর্বে মহানবী (সা.) যে পদ্ধতি ও অভ্যাসের উদাহরণ দেখিয়ে গেছেন। সেই অভ্যাস বর্তমান কালে যদি কেউ নিয়মিত পালন করে তবে তার সাস্থ্যের জন্য আর নতুন কোন পরামর্শের দরকার হবে না । উক্ত পোষ্ট এ রাসুল (সা.)-এর বরকতময় অভ্যাস এর কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হলো। পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অপূর্ব মিল ও তুলে ধরা হলো;
১.ঘুম থেকে উঠার পর দুই হাতের তালু দিয়ে মুখমণ্ডল ও দুচোখ মর্দন করা জাতে তন্দ্রাভাব দূর হয়ে যায় ।(শামায়েলে তিরমিজি)ঃ এ কাজটি শুধু বিজ্ঞানসম্মত নয় ,স্বাভাবিক ভাবেই আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো ,এ অভ্যাস করলে ঘুম থেকে কত দ্রুত পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তখন আর তন্দ্রা ভাবটা থাকে না
আরো পড়ুনঃ এই ৫ শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আল্লাহ্ সবসময় থাকেন!! || Allah is always with these 5 classes of people
২. ঘুম থেকে উঠেই মেসওয়াক করা।(আবু দাউদ)ঃ মেসওয়াক করা রাসুলে আকরাম (সা.)- এর জিবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। হুজুর (সা.) মেসওয়াক সম্পর্কে অনেক ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আধুনিক চিকিৎসাবিদগন এ সুন্নত থেকে বেশ কিছু তথ্য বের করেছেন। দাঁতের ভয়ংকর কয়েকটি রোগ হয়ে থাকে। যেমন;
জিঞ্জিভাইটিস (Gingivititis) -এ রোগ হলে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে থাকে এবং পচন ধরে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
কেরিস টিথ- এ রোগ হলে দাঁতের ক্ষয় শুরু হয়।
পাইয়োরিয়া (pyorrhoea)- এতে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, রক্ত ঝরে ।
মেসওয়াক এ রোগ গুলো দূর করতে সক্ষম। গাছের ডাল দ্বারা মেসওয়াক করা সুন্নত ।ব্রাশ দ্বারা সুন্নত নয়। দেখা গেছে পাইয়োরিয়া হলে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় তখন ডাক্তারগন পরামর্শ দেন মাড়িতে শক্ত কিছু দিয়ে হালকা হালকা করে চাপ দেওয়ার জন্য।মেসওয়াক এ ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করে যা ব্রাশে হয় না । তাছাড়া মেসওয়াক এর চাপটা একটু শক্ত হওয়ায় দাঁত পরিষ্কার হয় বেশি।
৩. দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ভালো ভাবে ধোঁয়ার পরে পানির পাত্রে হাত দেওয়া। (তিরমিজি)ঃ এটা সাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি বিষয় । ঘুমে থাকা অবস্থায় অচেতনভাবে শরীরের গুপ্তাঙ্গে সাভাবতই হাত যায় ।ফলে সেখানে থেকে নানা প্রকার রোগ জিবানু হাতে লাগে ।তাই সেই হাত না ধুয়ে কিছু খেলে মারাত্মক রোগ হতে পারে। তাছাড়া হাতে লেগে থাকা জিবানু থেকে বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক রোগ ও হতে পারে।যেমন;
গুপদ্বারে হাত লাগলে এ থেকে বিভিন্ন রকম ক্রিমি তো আছেই ,এছারাও পুরুষের গণরিয়া থেকে অন্যজন সংক্রামিত হতে পারে । মেয়েদের ট্রাইকোমনাস (Trichomonus) থাকলে সংক্রামিত হতে পারে।
৪. পায়খানায় জুতা পায়ে মাথা আবৃত করে যাওয়া ।(ইবনে সা'দ, জাদলু মা'দ)ঃ পায়খানায় বহুবিদ রোগ জীবাণু থাকে ,বিশেষ করে বক্র কৃমির ডিম ( Hook Warm) যা খালি চোখে দেখার কোন উপায় নেই। খালি পা থাকলে এগুলো সহজেই ত্বকের গভীরে পৌঁছে যায়। ফলে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। রক্তস্বল্পতা , অনিয়মিত পায়খানা হয় ।শরীরে ঘন ঘন জ্বর দেখা দেয়। শরীর দুরবল হয়ে পরে ।জুতা পায়ে থাকলে সে আশংকা আর থাকে না ।
আরো পড়ুনঃ রাসূল সা:-এর ১০০টি সুন্নাহ, আপনার জীবন পরিবর্তন করে দিবে!
টুপি পড়াঃ মাথার চুল সংববেদনশীল । এগুলো যেমন অতি সহজে জীবাণু ধারণ করতে পারে তেমনি জীবাণু ছড়াতেও সক্রিয় । তাই অস্ত্রোপচারের সময় ডাক্তারগণকে দেখা যায় ,তারা মুখমন্ডল ছাড়া মাথাও টুপি দিয়ে ঢেকে ফেলেন জাতে করে কোন রোগ জীবাণউ ছড়াতে না পারে । পায়খানায় অসংখ্য রোগ জিবানু ছড়িয়ে থাকে ।মাথা আবৃত থাকালে চুল সে জীবাণু ধারণ থেকে রক্ষা পায়।
৫. পোশাব -পায়খানায় ছিটাফোটা থেকে সতর্ক থাকা। (বুখারী,তিরমিজি )ঃ লক্ষনীয় বিষয় গুলো , শরীরে যে সমস্ত রোগ জীবাণু বের হয় তার ৯০% প্রসাবের সাথে আর ১০ % পায়খানার সাথে বের হয় । প্রসাবের ছিটেফোটা থেকে সতর্ক থাকা শুধু সুন্নতের জন্য নয় স্বাস্থ্যের জন্যও এদিকে লক্ষ্য রাখা অতন্ত জরুরী ।হরেক রকম রোগ শরীরে প্রবেশ করে ।জেগুলো শরীরে আশ্রয় নিতে পারে না এর ৯০ ভাগ প্রসাবের সাথে বের হয়ে যায়। তাই এর ছিটাফোটা কাপড় অথবা শরীরে লেগে থাকে তাহলে রোগটা আবার শরীরে প্রবেশ করতে পারে অথবা অন্য জায়গায় ছড়াতেও পারে।
৬. পায়খানায় ঢিলা ও পানি উভয়টায় ব্যবহার করা । (তিরমিজি)ঃ হুজুরপাক (সা.) পরিষ্কার - পরিচ্ছন্নতার দিকে অধিক দৃষ্টি রাখতেন। শরীরে কোথাও যেন কোন রোগ জীবাণু লেগে না থাকে এজন্য সাহাবীদের নসিহত করতেন। পূর্বেই বলা হয়েছে , শরীরের নানা প্রকার জীবাণুর ১০ শতাংশই মলত্যাগের সাথে বের হয় ।মলত্যাগ শেষ হলে গুহ্যদ্বার পানি দিয়ে ধোঁয়ার পূর্বে ৩ বার ঢিলা দিয়ে ভালোভাবে মুছলে আর কোন নাপাক লেগে থাকার আশংকা থাকে না । এরপর পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দরভাবে পরিষ্কার হওয়া যায় এবং কোন জীবাণু লেগে থাকে না ।
৭. অজু করাঃ এটা শুধু সুন্নত নয় , নামায ও কোরআন শরীফ ধরার জন্য অজু করা ফরয ।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,"পাক না হয়ে তোমরা কোরআন ধরো না ",
নামায পড়ার জন্য অজু করার শর্ত ;শরীরের যে অঙ্গ গুলো কাপড়ের বাইরে থাকে যেমন, হাত ,মুখমন্ডল, পা টাকনু পর্যন্ত ওজুতে এসব জায়গা ধুতে হয়। ফলে এগুলো রোগ জীবাণু মুক্ত হয় । এছাড়া ধোঁয়ার সময় এ সকল স্থানের স্নায়ু গুলো (Nerve) ও উপশিরা (Capillary) গুলো ঠান্ডা হয় যাতে রক্তের স্পন্দন সহজ হয়। গর্দান মাসেহের দ্বারা মস্তিষ্ক ঠান্ডা ও স্থির থাকে । এমনিভাবে দৈনিক ৫ বার অজু করলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে জীবাণু থাকতে পারে না ।
আরো পড়ুনঃ বাছাই করা ১৩ টি ইসলামিক স্ট্যাটাস 🌺|| New Islamic Status Bangla
৮. দাঁড়ি রাখা সুন্নতে মুয়াক্কাদা ঃ দাঁড়িতে পুরুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ।দাঁড়ি না রাখলে মুখের ত্বকে দাগ পড়ে যায় । বার বার সেভ করার ফলে ত্বকের স্পর্শকাতরতা কমে যায় । দৃষ্টি শক্তি লোপ পেতে থাকে ।
৯. নাভীর নিচের,বগলের চুল কাটা। (মুসলিম)ঃ বগলের নিচের ও গুপ্তাঙ্গের চুল সবসময় ঢাকা থাকে বিধায় এগুলোত্রে ময়লা জমে ।ফলে নানা ধরণের জীবাণুর জন্ম হয় । স্বভাবতই এগুলো অনেক রোগ সৃষ্টি করতে পারে ।
তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন ,'৪০ দিনের বেশি এগুলো না কাটলে গুনাহ হবে ।'
১০.চুল ধোঁয়া, তৈল লাগানো ও আঁচড়ানো সুন্নতঃ চুল ধুলে ময়লা দূর হয়। আর আঁচড়ালেও ময়লা দূর হয়। চুলে তৈল দিলে মাথা ঠান্ডা থাকে । গোড়া শক্ত হয়। চুলের শিকড় (Root) গভীরে থাকে ।চুল কালো হয়।
১১. নোখ কাঁটা ঃ সুস্থ স্বাস্থ্য রক্ষার্থে নখ কাটা অতন্ত জরুরী। নখ না কেটে খাবার খেলে সেখানে জমে থাকা ময়লা পেটে গেলে খাবার হজমে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। আমাশায়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের কৃমির জন্ম হতে পারে ।অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সূচ কৃমি (Pinworm) ও বক্র কৃমি ( Hookwarm) হয়ে থাকে । সূচ কৃমি হলে চুলকানির সৃষ্টি হয় । গুহ্যদ্বারে একজিমা দেখা দেয়। রাতে ঘন ঘন প্রসাব হয় । ভেজাইনেটিস (Veginetis) রোগের প্রাদুর্ভাব হয়।
১২. মাথা আবৃত করে খানা খাওয়াঃ পূর্বেই বলা হয়েছে মাথার চুল সংবেদনশীল । এগুলো যেমন জীবাণু ধারণ করতে পারে তেমনি ছড়াতেও পারে দ্রুত । তাই খাবারে যাতে জীবাণু ছড়াতে না পারে সেজন্য মাথা ঢাকার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে ।
১৩. গোসল করাঃ প্রথেমে মাথায় ও কাধে পানি দেওয়া । গোসল করলে শরীরের ময়লা দূর হয় । রোগ জীবাণু থাকে না । মাথায় পানি দেওয়ার ফলে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ দূর হয়।
আরো পড়ুনঃ ঘরের ১৫টি সুন্নত
১৪. মদ ও শুকুরের গোস্ত না খাওয়া ঃ এগুলো শুধু হুজুর (সা.)-এর পরিত্যাজ্য বস্তু নয় ।কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এগুলোকে হারাম ঘোষনা করেছেন। মদ পান করলে লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় । কোন ঔষধ শরীরে কাজ করে না। ফুস্ফুস ও হৃৎপিণ্ডে পানি জমে যায় । শ্বাস - প্রশ্বাস নিতে খুব অসুবিধা হয়। কিডনিতে অসুবিধা করে। শুকুরের মাংসে এমন এক প্রকার জীবাণু থাকে যা সিদ্ধ করলেও সহজে নষ্ট হয় না । এ জীবাণু থেকে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। ফিতা কৃমির ( Tapeworm) সৃষ্টি হয়। বড়ি বড়ি পায়খানা হয় ।রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
১৫.অজু করে ঘুমানোঃ সারাদিন ক্লান্তির পর রাতে শোয়ার সময় শরীর গরম ও মস্তিষ্ক অস্তির হয়ে যায় ।সেজন্য ভালো ভাবে ঘুম হয় না । ঘুমে স্বপ্ন দোষ হয়। ঘুমের প্রথমে অজু করলে উপশিরা স্নায়ু ঠান্ডা হয় । ঘার মাসেহ করায় তাৎক্ষণিক মাথা ঠান্ডা হয় এবং স্থির থাকে । ফলে ঘুম শান্ত ভাবে হয় । ঘুমে স্বপ্ন দোষ খুব কম হয়।
১৬. ডান পাশে শোয়াঃ ডান দিকে কাত হয়ে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। পাকস্থলীর খাদ্য শিষণ দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়ার পথ হলো দান দিকে । তাই ডান দিকে কাত হয়ে শুলে খাবার পরিপাকে সুবিধা হয়। খাবার একত্রে আর জমে থাকে না ।
আরো পড়ুনঃ জান্নাতে যাওয়ার ১০ টি সহজ আমল | 10 easy times to go to paradise ||
হুজুর (সা.)- এর প্রতিটি কাজয় ছিল সহজ ও বাস্তবধর্মী ।উপরে তার সামান্য কয়েকটি বরকতময় অভ্যাসের আলোচনা হলো । এ সুন্নত গুলো বাস্তব ও আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অপূর্ব মিল তথা শারীরিক সবুস্থ্যতা বজায় রাখতে যথেষ্ট উপকারী। সাথে সাথে রয়েছে এর অনেক সওয়াব ও ফজিলত ।মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে রাসুল ( সা.) মতাদর্শে সঠিকভাবে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment