জান্নাতে যাওয়ার ১০ টি সহজ আমল
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ, Extraordianary এর পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম।আজ আমরা জান্নাতে যাওয়ার ১০ টি আমল জানবো। মুসলমানের স্থায়ী ঠিকানার নাম জান্নাত। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী । পরকালই অসীম- অনন্ত। দুই দিনের এই জীবনে তাই জান্নাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আসুন,ইসলাম নির্দেশিত পথে নিজেকে পরিচালিত করে এ পথকে সুগম ও মসৃণ করি । জেনে নিই হাদিসের আলোকে জান্নাতে যাওয়ার ১০ টি আমল। তা হলো;
১. সরলতাঃ সহজ-সরল ব্যাক্তি আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয় । তিনি তাদের প্রতিদান হিসেবে জান্নাত দিবেন।
উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন,'আল্লাহ তায়ালা সে ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যে সহজ-সরল। ক্রেতা হিসেবে হোক বা বিক্রেতা হিসেবে হোক । বিচারক হিসেবে হোক বা বিচারপ্রাথী হিসেবে।' ( নাসাইঃ ৪৬৯৬)
২.কয়েকটি মূল্যবান শিষ্টাচারঃ কিছু শিষ্টাচারের ফজিলত অনেক বেশি । যেমন;
উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'তোমাদের পক্ষ থেকে ৬ টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দাও। আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। সত্য কথা বলো।ওয়াদা পূর্ণ করো। আমানত ফিরিয়ে দাও । লজ্জাস্থানের হেফাজত করো। দৃষ্টি সংযত করো। হাতকে বিরত রাখো।' ( মুসনাদে আহমদ ঃ ২২৮০৯)
আরো পড়ুনঃ এই ১০টি হারাম কাজ করলে জাহান্নামের অধিবাসি হবেন!
৩. তাহাজ্জুতঃ শেষ প্রহরে পৃথিবী যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন আরামের বিছানা ছেড়ে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার নামই তাহাজ্জুত। তাহাজ্জুত নামাজ জান্নাতে নিয়ে যাবে আমাদের।
আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'হে লোকসকল, সালামের প্রসার করো ।খাবার খাওয়াও। রাতে যখন সবাই ঘুমে বিভোর তখন নামাজ পড়ো। শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো।' (ইবনে মাজাহঃ১০৯৭)
৪. এতিমের তত্ত্বাবধানঃ এতিমের তত্ত্বাবধান করা অনেক সওয়াবের কাজ। এটি জান্নাতে যাওয়ার আমল।
সাহাল ইবনে সাআদ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) নিজের তর্জনী ও মধ্যমা একত্র করে বলেন, 'আমি ও এতিমের তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এভাবে থাকবো।'( বুখারীঃ ৬০০৫)
৫. রোগীর সেবা করাঃ রোগীর দেখাশোনা ও সেবা করা জান্নাতি আমল।
সাউবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যাক্তি রুগী দেখতে যায় সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল আহরণ করতে থাকে। '(মুসলিমঃ ২৫৬৮)
আরো পড়ুনঃ নামাজে মনোযোগ বাড়াতে মনোবিজ্ঞান কি বলে? জেনে নিন!
৬. ফরজ নামাজঃ নামাজ জান্নাতের চাবিকাঠি । জান্নাতে যেতে হলে নামাজের যত্ন নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।
রাবিআ ইবনে কাআব আসলামি (রা.) বলেন, ' এক রাতে আমি রাসুল (সা.) -এর সঙ্গে ছিলাম ।তার ওযুর পানি এনে দিলাম এবং প্রয়োজনীয় কাজ করে দিলাম ।তিনি আমাকে বললেন, আমার কাছে কি চাও? আমি বললাম আপনার সঙ্গে জান্নাতে থাকতে চাই। তিনি বললেন আর কিছু ?আমি বললাম এটিই চাই ।তিনি বললেন, অধিক সিজদার মাধ্যমে তোমার জন্য আমাকে সাহায্য করো ।' (মুসলিমঃ ৪৮৯)
৭. সুন্নত নামাজঃ ফরজ নামজের আগে ও পরে সুন্নত নামাজগুলো আদায় করার গুরুত্ব অপরিসীম । হাদিসে সেগুলো কে জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম বলা হয়েছে।
উম্মে হাবিবা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যাক্তি দিনে রাতে ১২ রাকাত নামাজ পড়ে তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি বানানো হয় । জোহরের আগে ৪ রাকাত, পরে ২ রাকাত। মাগরিবের পরে ২ রাকাত । এশার পরে ২ রাকাত । ফজরের আগে ২ রাকাত ।' ( তিরমিজিঃ৬৩৬২)
৮. মসজিদ নির্মাণঃ মসজিদ নির্মাণে অংশ নেওয়ার ফজিলত অনেক বেশি । মসজিত নির্মাতার জন্য জান্নাতে আলিশান বাড়ি তৈরি করবেন আল্লাহ তায়ালা।
উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরি করেন।' (বুখারীঃ৪৫০)
৯.আয়াতুল কুরসিঃ কোরআনে কারীমের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি । নামাজের পর এটি পড়তেন রাসুল(সা.) ।
আবু উমামা বাহিলি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যাক্তি প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে মৃত্যু ছাড়া কোন বাধা নেই।' (নাসায়িঃ ৯৯২৮)
আরো পড়ুনঃ গুনাহ থেকে বাঁচার ৭০টি শক্তিশালী উপায় | 70 Powerful Ways to Avoid Sin
১০. হজঃ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ হজ। কবুলকৃত হজের প্রতিদান একমাত্র জান্নাত।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যে ব্যাক্তি হজ করে, কোন অশ্লীল কথা বলে না এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয় না ,সে মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়া দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে।' (বুখারিঃ ১৫২১)
আরো ইরশাদ হয়েছে , 'কবুলকৃত হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।' (মুসনাদে আহমদঃ ১৪৫২২)
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উক্ত আমল্গুলো করার মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment