৪৫ টি অজানা শিরক
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ , Extraordianary - এর পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম । আজ আমরা ৪৫ টি শিরক সম্পর্কে জানবো যা আমরা নিয়মিত করে থাকি।
শিরক হচ্ছে সকল পাপের চাইতে বড় পাপ। যা আল্লাহ তায়ালা কখনো ক্ষমা করবে না । যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তাহলে তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে। শিরক এর ভয়াবহতা এত বেশি যে ,শিরক মানুষের সব আমল নষ্ট করে দেয়। মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন;
" নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তার সাথে শিরক এর অপরাধ ক্ষমা করবেন না । আর ইহা ব্যাতিত জাকে ইচ্ছা ( তার অন্যান্য অপরাধ ) ক্ষমা করে দেন।" (সূরা আন নিশা আয়াত ৪৮)
হাদিসে বর্ণিত আছে;
"যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক না করে মারা যাবে ,সে জান্নাতে প্রবেস করবে।আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে ,সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।" (মুসলিমঃ ৯৩)
আসুন জেনে নিই ৪৫ টি শিরক সম্পর্কে যা আমরা না জেনে করে থাকি
আরো পড়ুন ঃ আল্লাহর ৫০টি উপদেশ আপনাকে জ্ঞানী করে দিবে!!
১. গায়রুল্লাহর নামে জিকির করাঃ আল্লাহর জিকিরের ন্যায় কোন নবি- রাসূল, পীর, অলি-আওলিয়া, বুজুর্গ , আলিমের নাম জব করা শিরক। যেমন ঃবিপদে পরলে তাদের নামে অজিফা পরা ।যেমন ঃ ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামিন, ইয়া রসুলাল্লাহ , নুরে রসুল,নুরে খোদা, হক বাবা ,হক বাবা ইয়া বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানি ,ইয়া গাউসিল আজম ইত্যাদি নাম জব করা শিরক ।
২. পীর,ফকির ও কবিরাজের শয়তানি ও কারসাজিকে ওলীর কেরামত মনে করাও শিরক।
৩. নবী,ওলী -আওলিয়া ও পীর বুজুর্গদের খুশি করার জন্য নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করা শিরক।
৪. [ মূল আল ইসলাহ সিরিজ ,সংকলনে -মুহাম্মদ আব্দুর রব আফফ]
৫. ন্যাংটা বাবায় বিশ্বাসঃ এরূপ বিশ্বাস করা যে ন্যাংটা বাবা ভবিশ্যত বা গায়েব জানেন ,তার ভালো মন্দ করার ক্ষমতা আছে এটা বিশ্বাস করা শিরক।
৬. কোন নেতা ,লিডার বা সরণীয় - বরণীয় ব্যাক্তি বর্গের ছবি, চিত্র , প্রতিকৃতি ,ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরি করা শিরক । মাঠে -ঘাটে ,অফিস -আদালতে , ও বিশেষ গুরুতপুরন স্থানে এগুলো স্থাপন করা ,এগুলোর উদ্দেশ্যে পুস্পস্থবক অর্পণ করা শিরক।
৭. সমাধি, সৃতিস্তম্ভ ,শহিদ মিনার ঃ সম্মানিত ব্যাক্তিবর্গের স্মরণে সমাধি ,সৃতিস্তম্ভ ,সৃতিসোধ বা শহিদ মিনার নিরমাণ ,এগুলোকে সম্মান জানানো ,সামনে দাড়িয়ে নিরবতা পালন করাও শিরক।
৮. হেদায়াত, সাফায়াত ও মুক্তি আল্লাহ ব্যাতিত অন্যের নিকট কামনা করাও শিরক।
৯. হিন্দুদের অনুকরণে কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে বা কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গল প্রদিব বা মোম্বাতি জ্বালিয়ে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা শিরক।
১০. পীরের চেহারা, আকৃতি ইত্যাদি কল্পনা করে মরাকাবা,ধ্যান ,জিকির বা অন্য জেকোন ইবাদাত করা শিরক।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ১০০টি ইসলামিক নাম ও তার বাংলা অর্থ. Meyeder Islamic Name
১১. জাদু-টোনা,বান মারা একটি শিরক।
১২. একদল ফকির বলেন,আল্লাহ যা করান তাই করি । আল্লাহ সালাত আদায় করান না তাই আদায় করি না । আল্লাহ গাযা টানাচ্ছেন তাই টানি ,তাকদিরে সালাত থাকলে তো সালাত আদায় করব। এরূপ বাটপারি কথা বলাও শিরক।
১৩. সীনায় সীনায় মারেফতি ঃ ভন্ডপীর বা দরবেশ দাবিদার একদল লোক বলে থাকে, কোরয়ান শরিফ মোট ৪০ পারা। ৩০ পারায় জাহেরি এলেমের বিষয় আছে। বাকি ১০ পারা মারেফতি বিদ্যায় ভরা রয়েছে। এই ১০ পারা আমরা সীনায় সীনায় পেয়েছি । শরিয়তের আলেমরা এগুলোর খবর রাখেন না ।এসব ভন্ডদের এমন কথা ও শিরক এর অন্তর্ভুক্ত ।
১৪. অনেকের ধারনা,মুরিদ যখন মারেফতের উচ্চ শিখরে পৌঁছে যায় , তার জন্য শরিয়তের হুকুম আহকাম ,সালাত ,সওম ইত্যাদি মাফ হয়ে যায় এরূপ মনে করা শিরক।
১৫. শিরকের গন্ধযুক্ত উপাধিঃ পীর বা ওলিকে এমন কোন উপাধিতে সম্বোধন করা উচিত নয় যা অরথগত দিক দিয়ে আল্লাহ তায়ালার জন্য প্রযোজ্য ।যেমন ঃ গাউছুল আজম (সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী ), গরিবে নেউয়াজ ( গরিব্রা যার মুখাপেক্ষী), মুস্কিল কোষা ( যার মাধ্যমে বিপদ আপদ দূর হয়) , কাইয়ুমে জামান ( জামানা কায়েম করেছেন জিনি) ইত্যাদি। এভাবে সম্মধোন করলে কঠর শিরক হয়।
১৬. সন্তানের নামকরনে নবী, আওলিয়া ও পীরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন।যেমন ঃ গোলাম মুস্তাফা ( মুস্তফার গোলাম), আব্দুন্নবী (নবির দাস), আব্দুর রসূল (রসূলের দাস ) , আলী বখস ( আলী রাঃ এর দান), হোসেন বখস ( হুসাইন রাঃ এর দান ) , পীর বখস (পীরের দান) , গোলাম মহিউদ্দীন ( মহিউদ্দিনের গোলাম) , আব্দুল হাসান ( হাসানের গোলাম) ,আব্দুল হুসাইন ( হুসাইনের গোলাম ) ,গোলাম রসূল ( রসূলের গোলাম) ইত্যাদি নাম রাখা শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
১৭. কুরআন - হাদিস ভিত্তিক আলেমদের অনুসরণ ছেরে দিয়ে পীর ধরা ও তার অন্ধানুসরন করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
১৮. অনেকের ধারণা মানুষের ভালো- মন্দ ,বিপদ-আপদ, উন্নতি - অবনতি ইত্যাদি গ্রহ - নক্ষত্রের প্রভাবে হয় । কেউ বিপদে পরলে বলা হয় এই ব্যাক্তির উপরে শনি গ্রহের প্রভাব পরেছে বা রাহুগ্রাস হয়েছে । কারো আনন্দের খবর শুনলে বলা হয়ে থাকে , এই ব্যাক্তি মঙ্গল গ্রহের সু নজরে আছে। এগুলো বলা ও মনে করা শিরক।
১৯. অনেকের ধারণা চন্দ্র ও সূর্য গ্রহন মানুষের ভালো -মন্দ, জন্ম - মৃত্যু , বিপদ-আপদের উপর প্রভাব বিস্তার করে ।এটা ভাবাও শিরক।
২০. গাইরুল্লার নামের কসম করা ঃ আবদুল্লাহ ইবনে উমর ( রা) থেকে বর্ণিত ,রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন । যে ব্যাক্তি গাইরুল্লার নামের কসম করল ,সে কুফরি করল অথবা শিরক করল। (তিরমিজিঃহা/১৫৩৫। মুলত আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো নামে কসম করলে কসম হয় না । যেমনঃ রাসূলুল্লাহর কসম,কাবাঘরের কসম, নিজের চোখের কসম, বাবা-মায়ের কসম, বিদ্যা বা বইয়ের কসম, মাটির কসম ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ TOP 10 MOST BEAUTIFUL WOMAN IN ASIA 2024
২১. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পীর ,ওলি বা বুজুর্গ ব্যাক্তির অসিলা গ্রহনঃ আল্লাহকে পাওয়ার জন্য তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের লক্ষে ক্ষমা ও সাহায্য পাওয়ার জন্য কোন জীবিত বা মৃত পীর ,ওলী বা বুজুর্গ ব্যাক্তি কে অসীলা বা মাধ্যম হিসেবে গ্রহন করাও শিরক।
২২. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জীবন বিধান প্রণেতা মনে করা - আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র মানব জাতির সাবিক উন্নতির জন্য আইন বিধানের অধিকার রাখেন ।এ কাজের যোগ্যতা তিনি ছাড়া আর কেউ নন। (সূরা ইউসুফঃ ৪০)
২৩. মানব রচিত বিধান দ্বারা শাসন করা , এমনিভাবে ও চিরাচরিত অভ্যাস দ্বারা ফায়সালা করাও শিরক ।
২৪. সমাজতন্ত্র , পুঁজিবাদ , জাতীয়তাবাদ , প্রগতিবাদ , ধর্মনিরপেক্ষবাদ সমর্থন ও বিশ্বাস করাও শিরক।
২৫. মসজিদ ছাড়া অন্য কোন যায়গায় খাদেম হওয়া ।মাজারে খাদেম হওয়া শিরক। (বাকারাহ ঃ ১২৫)
২৬. কুরআনের বিষয়ে এমন ধারণা করা কুরআন ৯০ পারা । ৬০ পারা গোপনে আছে ।এটা ভাবাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
২৭. দ্বীন ইসলামের শরীয়ত মারেফত , হাক্কিকত , তরিকত , নামে ভাগাভাগি সৃষ্টি করা ইসলামি শরিয়ত ছাড়া সব কুফরি।
২৮. পীর ধরা ওয়াজিব । যার পীর নাই তার শীর নাই। যার পীর নাই তার পীর শয়তান , এসব কথা বলা ও বিশ্বাস করা শিরক ।
২৯. মাজারের পুকুরের মাছ , কচ্ছপ কুমিরকে কথিত ওলির সংশ্লিষ্ট কিছু মনে করা ও তাদের খাবার দেওয়া এবং খাবার গ্রহন করাকে সউভাজ্ঞ মনে করা শিরক।
৩০. পীর- মুরশিদ , রাষ্ট্রীয় নেতা-নেত্রীদের সম্মানের উদ্দেশ্যে পশু জবাহ করাও শিরক।
আরো পড়ুনঃ ১৫টি ভাইরাল ফেসবুক ক্যাপশন 🍁| Facebook Caption Bangla ♥️
৩১. নবী (সা) জীবিত রয়েছেন এটা বিশ্বাস করাও শিরক।
৩২. নবী (সা) কে হাজির নাজির মনে করাও শিরক।
৩৩. কাশফ, ইলহাম , মুরাকাবা দাবি করা ও চর্চা করাও শিরক।
৩৪. আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে শপত করাও শিরক।
৩৫. আল্লাহর মত করে অন্য কোন সত্তাকে বিনীত ও সম্মানের সাথে মহাব্বত করাও শিরক।
৩৬. যে বিষয়ে আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কেউ সামরথ রাখে না সে ক্ষেত্রে অন্যের উপর ভরসা করা ।যেমন ঃ প্রয়োজন পুরনের জন্য মৃত ও অনুপস্থিত কোন সত্ত্বার উপর ভরসা করা শিরক।
৩৭. আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কিছুকে ।যেমন ঃপ্রতিমা, মূর্তি ,আস্থানা, দরগাহ বা কবরে শায়িত মৃত ব্যাক্তি ,অনুরুপ অনুপস্থিত জীন ও মানুষকে গোপনে গোপনে ভয় করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
৩৮. বিপদ -আপদ ও বদনজর থেকে মুক্তির জন্য তাবিজ -কবজ ঝুলানো (মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড ,পৃষ্ঠা ঃ ১৫৪) সুতা বালা বা অন্য কিছু পরিধান করা শিরক। (মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড , পৃষ্ঠা ঃ ১৫৬) , ইবনে মাজাহ হাঃ ৩৫৩১ ।
৩৯. হারাম- হালাল ও বিচার -ফায়সালার ক্ষেত্রে আলিম, পীর , ইমাম, দরবেশ ও শাসকদের অন্ধভাবে অনুসরনও শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।(সূরা ঃ ৩১)
৪০. কোন কিছুতে অশুভ বা কুলক্ষন মনে করা বা কোন কিছু দ্বারা নির্ণয় করা । যেমন ঃ বিকলাঙ্গ ,প্যাঁচা বা অপছন্দনীয় দেখলে অসুভ মনে করাও শিরক ।
আরো পড়ুনঃ ভালো কর্মের ফল(বাংলা গল্প)/Bengali Short Story/Bangla Moral Story
৪১. সুনাম অর্জনের জন্য লোক দেখানো বা শুনানো ইবাদাত (রিয়া) করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
৪২. আমল ইবাদাত দুনিয়ার জন্য করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
৪৩. আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো বা কিছুর জন্য সিজদা বা মাথানত করা । যেমন ঃ কদম বুচি করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
৪৪. আল্লাহর সিফাত সমুহে শিরক করা। যেমন ঃ আল্লাহর মত অন্য কাউকে পরম করুনাময় ও অসিম দয়ালু , রিজিকদাতা , বিধানদাতা ও খমাশীল মনে করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত ।
৪৫. আল্লাহ ব্যাতিত কোন জীন ,ওলী ,পীর ,ফকির ইত্যাদির নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য প্রাথনা ,তাদের উপর ভরসা ,তাদের উরদেশ্য পশু জবাই করা শিরক
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল প্রকার শিরক থেকে হেফাজত করুন ।আমিন।
Comments
Post a Comment