এই ১০টি হারাম কাজ করলে জাহান্নামের অধিবাসি হবেন!
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ, Extraordianary এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম । আজ আমরা এমন ১০ টি হারাম কাজ সম্পরকে জানবো যে কাজগুলো করলে মানুস জাহান্নামের অধিবাসী হবে । হারাম আরবি শব্দ যার অর্থ নিষিদ্ধ । হারাম বলা হয় এমন জিনিসকে জা কোরআন ও সুন্নাহর মাধ্যমে নিষিদ্ধ হয়েছে এবং এই নিষিদ্ধ কাজ গুলো পরিহার করলে মানুষ ইহকালিন ও পরকালিন শান্তি ও মুক্তি লাভ করবে। এবং টা উপকারী ও বটে। সেটা শারীরিক ভাবে হোক কিংবা মানসিক ভাবে। কাজেই হারাম বিষয়গুলো থেকে আমাদেরকে অবশ্যয় দূরে থাকতে হবে। এই পোস্ট এ এমন ১০ টি হারাম বিষয় তুলে ধরা হলো।
আরো পড়ুনঃ ৪৫টি শিরক! যা আমরা না জেনে নিয়মিত করে থাকি!!
১. হস্তমৈথুন করা হারামঃ হস্তমৈথুন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। হাদিসে এই বেপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। নিশ্চিত সম্ভাবনা থাকলেও গোনাহ থেকে দূরে থাকাটায় উত্তম । তখন অজু করে নামাজে দাড়িয়ে জাওয়াটায় উত্তম। বা মৃত্যুর কথা সরণ করলে এই গোনাহ থেকে বেচে থাকা সম্ভব।আল্লাহ তায়ালার দেওয়া এই সুন্দর যৌবন টাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় । এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পরে ,তার এই হাত পরকালে সাক্ষী দিবে যে ,সে এই পাপ কাজ কোথায় কতবার করেছে। জা পবিত্র কালামে সুস্পষ্ট ভাবে প্রমানিত হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, সেই দিন আমি তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব , বরং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দিবে জা তারা অর্জন করত তা সম্বন্ধে । (আল কুরআন,৩৬ঃ৬৫)
রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি স্বীয় জিহ্বা এবং লজ্জাস্থানের জামিন হবে আমি তার জাহান্নামের জন্য জামিন হবো। (বুখারি,মিসকাত)
উক্ত হাদিস থেকে প্রমানিত হচ্ছে মানব দেহের এই দুটো অঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্যপূর্ণ ও বিপদজনক। এ দুটো অঙ্গের মাধ্যমে বিশেষ করে লজ্জাস্থানের মাধ্যমে পাপ করাতে শয়তানের জন্য খুব সুবিধা। এ দুটো অঙ্গের মাধ্যমে বেশিরভাগ পাপ হয়ে থাকে। যদি কোন ব্যাক্তি এ দুটো অঙ্গের হেফাজত করে ,বিশেষ করে জুবক অবস্থায় লিঙ্গের হেফাজত করে ,কোন প্রকারেয় বীর্যপাত ঘটাতে চেষ্টা না করে । তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশের বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে।
২. গান শোনা হারামঃ গান শোনা কবিরা গোনাহ। কিন্তু আমরা অনেকেই তা মানতে রাজি না,কিন্তু বড় বড় আলেমগন একে হারাম বলেই সাব্যস্ত করে থাকে। ইমাম মুহাম্মদ রহঃ জামে সগীর গ্রন্থর ১৩৯ পৃষ্ঠায় বলেন,
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ,আমার উম্মত যেন বাদ্যযন্ত্র ব্যাবহার থেকে মুক্ত থাকে । বাজনাদার নুপুর ও ঘুঙুরের আওয়াজও সাহাবাগন বরদাশ করতেন না । তাহলে গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রশ্নই কি অবান্তর নয়?
নাসাঈ ও সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে, একদিন হযরত আয়েশা(রাঃ) এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোন বালিকা আসলে আয়েশা (রাঃ) বললেন, খবরদার তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না । অতঃপর তিনি বললেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘন্টি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না। (সুনানে আবু দাঊদ ঃ ৪২৩১)
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন ,ঘন্টি , বাজনা, ঘুঙুর হলো শয়তানের বাদ্যযন্ত্র ।(সহিহ মুসলিম ঃ ২১১৪)
মৃদু আওয়াজের ঘন্টি , ঘুঙুরের যদি এই অবস্থা হয় তাহলে আধুনিক সুরেলা বাদ্যযন্ত্রের কি হবে তা খুব সহজেই বোঝা যায়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আরও ইরশাদ করেন , আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে ।আর তাদের মাথার ওপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমণিদের গান বাজতে থাকে । আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জমিনে ধসিয়ে দিবেন এবং তাদের কিছুকে বানর ও শুকুরে রুপান্ত্রিত করবেন। ( সুনানু ইবনে মাজাহঃ ৪০২০)
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ১০০টি ইসলামিক নাম ও তার বাংলা অর্থ. Meyeder Islamic Name
৩. ট্যাটু লাগানো হারামঃ এটা ইসলামে নিষিদ্ধ একটি বিষয়। কেননে আল্লাহপাক মানুষকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। এই সৃষ্টির মাঝে অন্য কিছু তৈরি করা ইসলামে নিষিদ্ধ ।
হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যে নারী পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে ,আর যে নারী অঙ্গে -প্রত্যঙ্গে উল্কি বা ট্যাটু আঁকে বা আঁকতে বলে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা অভিশাপ করেছেন। (সহিহ বুখারী)
৪. নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করাঃ নিজের শরীরে গায়ে আঘাত করা । দুঃখ বা কষ্ট পেলে নিজের বুকে -মুখে আঘাত করা । এটা সম্পূর্ণ হারাম। অন্যকে আঘাত করার বেপারেও একই কথা ।
আল্লাহ তায়ালা বলেন , হে ইমানদারগন ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না । কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যাবসা করা হয় তা বৈধ । আর তোমরা নিজেদের কাওকে হত্যা করো না । নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি দয়ালু। (সুরা নিসাঃ২৯)
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৫০টি উপদেশ আপনাকে জ্ঞানী করে দিবে!!
৫. বেগানা মেয়ের দিকে দৃষ্টিপাত ও কথাবার্তা ইত্যাদি হারামঃ বেগানা অথবা গায়রে মাহ্রাম মেয়ের সাথে দেখা দেয়া,কথা বলা, তাকানো বা তাকে স্পর্শ করা, টিজ করা ইত্যাদি সকল কাজই হারাম ও গর্হিত কর্ম । এই হারাম কাজগুলি কতটা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে তা সুস্পষ্ট । আমাদের এর থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, চখের জিনা হলো হারাম দৃষ্টিপাত । কর্ণদয়ের জিনা হলো , (গায়রে মাহরমের যৌন উদ্দীপক) কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হলো [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক ] কথাবার্তা বলা। হাতের জিনা হলো [গায়রে মাহরামকে ]ধরা বা স্পর্শ করা । পায়ের জিনা হলো [খারাপ উদ্দেশ্যে ] চলা।অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রুপ দেয় [যদি জিনা করে] অথবা মিথ্যা প্রমানিত করে [অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে ]। (সহিহ মুসলিমঃ ২৬৫৭)
৬.জুয়া ও মদ খাওয়া হারামঃ মদ ও জুয়া ইসলামের সবচেয়ে বর পাপগুলোর মধ্যে একটি। আল্লাহ ও তার নবি (সাঃ) আমাদের মদ খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন।
কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, হে ঈমানদারগন! মদ ,জুয়া, মূর্তি পূজার ব্যাদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমুহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ । এগুলো থেকে দূরে থাক ,আসা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে । (সুরা মায়েদাঃ৯০)
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন প্রতটি মাতাল করে দেওয়া বস্তুই মদ। আর প্রতিটি মদই হারাম। ( সহিহ মুস্লিমঃ২০০৩)
৭.সুদ দেওয়া ও নেওয়া হারামঃ রিবা[সুদ] ইসলামে কখনই অনুমোদিত নয় । কেননা এটাও আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। সুদের মাধ্যমে মূলত সমাজে দরিদ্রের সংখ্যা বাড়ে ।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরসাদ করেছেন, কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোক্টির মত জাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হয়ার কারণ এই যে , তারা বলে ব্যাবসা তো সুদের মত , অথচ মহান আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।কাজেই যে ব্যাক্তির কাছে তার রবের কাছ থেকে নসিহত পৌঁছে যায় এবন ভবিষ্যতে সুদখোর থেকে সে বিরত হয় ,সে ক্ষেত্রে জা কিছু সে খেয়েছে তা তো খেয়েই ফেলেছে এবং এ বেপারটি আল্লাহর কাছে সোপর্দ হয়ে গেছে ,আর এই নির্দেশের পরেও যে ব্যাক্তি আবার এই কাজ করে ,সে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। (সুরা বাকারাহঃ ২৭৫)
৮. মুসলমানকে গালি দেয়া বা হত্যা করা হারামঃ কোন মুসলমানকে গালি দেওয়া জায়েজ নয়। এটা ফাসেকী। আর হত্যা তো আরো জঘন্য। বিশেষ করে স্যোসিয়াল মিডিয়াতে আমরা যাকে তাকে উদ্দেশ্য করে গালির বণ্যা বয়িয়ে দিই ,এটা মারাত্মক গোনাহ হচ্ছে। বর্তমানে আলেমগন ট্রল করাকেও হারামের তালিকায় গণ্য করেছেন।কারণ সরয়ী অজর ছাড়া কোন মুসলমানের সম্মান হানি করা জায়েজ নয়। কাজেই এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য ।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন মুসলমাঙ্কে গালি দেওয়া ফাসেকী। আর তাকে হত্যা করা কুফরি । (বুখারিঃ৬০৪৪)
৯. আল্লাহর নাম ছাড়া কোন প্রাণি জবাহ করা হারামঃ যে কোন পশু জবেহ করার সময়ই আল্লাহর নাম নিতে হবে। আল্লাহর নাম না নিয়ে পশু জবেহ করলে সেটা হারাম হবে ।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, জেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়নি, সেগুলো থেকে ভক্ষন করো না; এ ভক্ষন করা গোনাহ। নিশ্চই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে -যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য করো , তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে। ( সুরা আনআমঃ১২১)
একটি হাদিসে এসেছে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,যে ব্যাক্তি আল্লাহ ব্যাতিত অন্য কারো নামে জবেহ করে তার উপর আল্লাহর লানত। (সহিহ মুসলিম)
আরো পড়ুনঃ একটি শিক্ষনীয় গল্প ||motivational story ||bangla short story ||emotional story
১০. আত্মহত্যা করা হারামঃ আত্মহত্যা মহাপাপ। এ কাজ থেকে বিরত থাকতে মহান আল্লাহপাক বিশেষভাবে নির্দেশ দান করেছেন এবং আত্মহত্যার পরিণামের কথা ভাববার জন্য কঠোর ও যন্ত্রণা দায়ক শাস্তির বর্ণনা দিয়ে ,
মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন, আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না । নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু এবং যে কেউ জুলুম করে ,অন্যায়ভাবে [আত্মহত্যা ] করবে ,অবশ্য আমি তাকে অগ্নিদগদ করব, আল্লাহর পক্ষে উহা সহজ সাধ্য । (সুরা নিসাঃ২৯-৩০)
আত্মহত্যার ভয়ানক পরিণতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি নিজেকে পাহাড়ের উপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে ,সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে লাফিয়ে পরে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে ।যে ব্যাক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করে ,সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ওইভাবে নিজ হাতে বিষ পান করতে থাকবে । আর যে ব্যাক্তি কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে ,তার কাছে জাহান্নামের সেই ধারালো অস্ত্র থাকবে ,যা দ্বারা সে সর্বদা লিজের পেট ফুড়তে থাকবে। ( বুখারী)
ইসলামি বিধানে আত্মহত্যা নাজায়েজ। এর প্রতিফলন চিরস্থায়ী জাহান্নাম । যে ব্যাক্তি আত্মহত্যা করে,সে শুধু নিজের উপরেই জুলুম করে না বরং এতে মা -বাবা,ভাই-বোন সহ আত্মীয় পরিজন সবাই খুব কষ্ট পায় এবং অত্যান্ত বিচলিতবোধ করে। যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেনো ,ইসলামের দৃষ্টি তে এ এক বিরাট অন্যায় ,কারণ এর দ্বারা আল্লাহর বেঁধে দেওয়া নিয়মের বরখেলাপ হয়ে যায়।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এইসকল হারাম কাজ থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন ।আমিন।
Comments
Post a Comment