এই ১৬ শ্রেণীর ব্যাক্তির নামাজ কবুল হয় না!
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ, Extraordianary এর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম । আজ আমরা এমন ১৬ শ্রেনির ব্যক্তি সম্পর্কে জানবো জাদের নামাজ কবুল হয় না ।
ঈমানের পর নামাজ হলো ইসলামের প্রধান ইবাদাত। আল্লাহ তায়ালা মানুষের উপরে প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ বা আবশ্যক করেছেন। আর এই নামাজকে যথাসময়ে আদায় করাও আবশ্যক করেছেন। আবার কোন ব্যাক্তির ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ ছেড়ে দেওয়াকে কুফরি কাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবী (সাঃ)। অথচ এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আল্লাহর হুকুম পালনে নামাজ আদায় করেন ঠিকই কিন্তু তাদের নামাজ কবুল হয়না। নামাযী অথবা নামাযের অবস্থা দেখে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হন না । এমন ১৬ শ্রেনির নামাযী সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৫০টি উপদেশ আপনাকে জ্ঞানী করে দিবে!!
১. তকদীর অস্বীকারকারী ব্যাক্তির নামায কবুল হয়য় না ।
আবূ উমামা করতিক বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , তিন ব্যাক্তির নিকট হতে আল্লাহ তায়ালা ফরয , নফল কিছুই গ্রহন করবেন না । তারা হলো ; পিতা মাতার অবাধ্য সন্তান, দান করে প্রচার কারি এবং তাকদির অস্বীকারকারী ব্যাক্তি । ( সহিহুল জামেঃ ৩০৬৫)
২. পরের বাপকে যে ব্যাক্তি নিজের বাপ বলে দাবি করে অথবা পরিচয় দেয়, তার নামায কবুল হয় না । যে লোক তার বাবাকে পরিত্যগ করে অন্যকে বাবা বলে দাবি করে ( নিজের বংশ পরিচয় গোপন করে অন্য বংশের পরিচয় দেয় ) অথবা নিজের মনিবকে ছেড়ে দিয়ে অন্য মনিবের নিকট পালিয়ে যায় তার ওপর আল্লাহ , ফেরেস্তাগন এবং সকল মানুষের অভিশাপ । তার ফরয বা নফল কোন ইবাদাতই গ্রহন করা হবে না । ( বুখারী , মুসলিম)
৩. যে ব্যাক্তি কোন মুসলিমকে হত্যা করে এবং তাতে সে গর্বোবধ করব ও খুশি হয়য় তার নামায কবুল হয়য় না । ( সহিহুল জামে ঃ ৬৪৫৪)
৪. কিসাসের বিধান বাস্তবায়নে যে বাধা দেয় অর্থাৎ খুনের বদলে খুনের বদলা নিতে যে ব্যাক্তি ( শাসন করতিপক্ষ বা বিচারককে) বাধা দেয় ।ওই ব্যাক্তির নামায কবুল হয় না । ( সহিহুল জামেঃ ৬৪৫১)
৫. যে ব্যাক্তি মদিনায় কোন বিদআত কাজ করে অথবা কোন বিদআতিকে আশ্রয় দেয় ।অথবা কোন দুষ্কর্ম করে বা দুষ্কর্মকারীকে আশ্রয় দেয় ।তার নামায কবুল হয় না ।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ১০০টি ইসলামিক নাম ও তার বাংলা অর্থ. Meyeder Islamic Name
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আয়িরা নামক যায়গা হতে অমুক যায়গা পর্যন্ত মদিনা হল হারাম । যদি কেউ এতে অঘটন ঘটায় ( কোন বিদ আত কাজ করে অথবা কোন বিদ আতকারিকে আশ্রয় দেয় । আথবা কোন দুষ্কর্ম করে বা দুষ্কর্মকারীকে আশ্রয় দেয়) তাহলে তার উপরে আল্লাহ তায়ালার, ফেরেস্তার ও মানুষের অভিসম্পাত। সে ব্যাক্তির কোন ফরয এবং নফল ইবাদাত কবুল হবে না ।
তিনি আরো বলেন,মুসলমান করতিক নিরাপত্তা দানের অধিকার সকলের ক্ষেত্রে সমান ।তাই যে ব্যাক্তি মুসলমানের দেওয়া নিরাপত্তাকে লঙ্ঘন করবেন, তার প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত এবং সকল ফেরেস্তা ও মানুষের ।আর কবুল করা হবে না তার কোন নফল কিংবা ফরয ইবাদাত।
৬. যে ব্যাক্তি মুসলমানদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে সে ব্যাক্তির নামায কবুল হয়য় না । (সহিহ মুসলিম ঃ ১৩৭০)
৭. দান করে যে ব্যাক্তি দানের কথা গর্ব করে প্রচার করে বেড়ায় তার নামায কবুল হয় না।
৮. এমন স্ত্রী যার স্বামী তার উপরে রাগ করে আছে। স্ত্রী স্বামীকে সর্বদা খোশ রাখবে ,তার ( ভালো কথা ও কাজে) আনুগত্য করবে,তার সব কথা মেনে চলবে, যৌন সুখ দিয়ে তাকে সর্বদা ত্রিপ্ত রাখবে, কোন বিষয়ে রাগারাগি হলে তারাতারি তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সব কিছুতে তাকে সন্তুষ্ট রাখবে ,এটায় স্ত্রীর ধর্ম ।
মহানবি (সাঃ) বলেন, তোমাদের (সেই) স্ত্রীরাও জান্নাতি হবে , যে স্ত্রী অধিক প্রনয়ীনি , সন্তান্দাত্রী , বার বার ভুল করে বার বার স্বামীর নিকট আত্তসমারপন কারিণী , যার স্বামী রাগ করলে সে এসে তার নিকট হাতে হাত রেখে বলে আপনি আমার উপর খুশি না হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না । ( সিলসিলাহ সহিহাহ ঃ ২৮৭) ।
কিন্তু এমন বহু মহিলা আছে ,যারা তাদের স্বামীর খেয়ে পরেও এমন রাগ রোষকে পরোয়া করে না । নারী স্বাধীনতার পক্ষপাতিনি স্বামীর সংসারেও পরম স্বাধীনতা ,সুখ ভোগ করতে গিয়ে স্বামীকে নারাজ রাখে ।ফলে আল্লাহ ও নারাজ হন এবং স্বামীকে খুশি না করা পর্যন্ত নামায কবুল হয় না। কারণ হুক্কুল ইবাদ আদায় না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ বান্দার তাওবাতে সন্তুষ্ট হন না । যার প্রতি অন্যায় করা হয় ,তার নিকট আগে ক্ষমা পেলে তবেই আল্লাহ ক্ষমা করেন ।
৯. জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন ,যে নবীজি (সাঃ) বলেছেন যখন দাস পালিয়ে যায়, তখন তার নামায কবুল হয় না।
১০. এমন লোক যে কারো বিনা অনুমতি ও আদেশেই কারো জানাজা পরায়। এমন ইমাম যার ইমামতি অধিকাংশ মুক্তাদিরা পছন্দ করে না । তার পেছনে নামায পড়তে তাদের রুচি হয়য় না । ইমামতিতে ভুল আচরন অথবা চরিত্রগত কোন কারনে অধিকাংশ লোকে তাকে ইমামতি করতে দিতে চায় না । এমন ইমামের নামায তার কান অতিক্রম করে না, মাথার উপরে যায় না , আকাশের দিকে ওঠেনা ,সাত আসমান পার হয়ে আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়া তো দূরের কথা ।
মহানবি (সাঃ) বলেন , তিন ব্যাক্তির নামায তার কান অতিক্রম করে না ।তারা হলো ;পালাতক ক্রীতদাস , যতক্ষণ না সে ফিরে আসে, এমন স্ত্রী যার স্বামী তার উপরে রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রী জাপন করেছে ( যতক্ষণ না সে রাজী হয়েছে ), এবং সেই সম্প্রদায়ের ইমাম জাকে লোক অপছন্দ করে । (সিলসিলাহ সহিহাহ ঃ২৮৮)
আরো পড়ুনঃ ৪৫টি শিরক! যা আমরা না জেনে নিয়মিত করে থাকি!!
১১. এমন লোক যে কোন গনকের কাছে ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ জানার আসায় গনককে ইল্মে গায়েবের মালিক মনে করে হাত দেখায় ।এমন ব্যাক্তির কেবল গনকের কাছে যাওয়ার কারণেই তার ৪০ দিনের (২০০ ওয়াক্তের ) নামায কবুল হয়য় না ।আর যদি গনক যা বলে তা বিশ্বাস করে ,তবে সে কাফির এ পরিণত হয়ে যায় । আর কাফেরের নামায ,রোজা কবুল হয়য় না ।
মহানবি (সাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি কোন গনকের নিকট উপস্থিত হয়ে ( ভূত ভবিষ্যৎ বা গায়েবি) বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তার নামায কবুল হয়য় না । (সহিহ মুসলিম ঃ ২২৩০)।
মহানবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষীর নিকট উপস্থিত হয়ে সে যা বলে তা সত্য মনে (বিশ্বাস) করল ,সে ব্যাক্তি মহানবি (সাঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের প্রতি কুফরি করল। ( সহিহুল জামেঃ ৫৯৩৯)
১২. মদ পানকারীর নামায কবুল হয় না।
মহানবী (সাঃ) বলেন, আমার উম্মতের যে ব্যাক্তি মদ পান করবে আল্লাহ তায়ালা তার ৪০ দিনের নামায কবুল করবেন না । ( সহিহুল জামেঃ ৭৭১৭)
১৩. এমন নামাজি যে নামায পড়ে কিন্তু নামায চুরি করে । দায়সারা ভাবে নামায পরে । ঠিকমতো রুকু সিজদাহ করে না । রুকুতে স্থির হয় না ,সিজদায় স্থির থাকে না । কোমর বাকানো মাত্র তুলে নেয়। সু সু করে দোয়া পরে চট পট উঠে যায় ।মাথা উচু করেই রুকু করে । কারো সিজদার সময় নাক মুসল্লায় স্পর্শ করে না ।কারো পা দুটি উপর দিকে পাল্লায় হালকা হউয়ার মত উঠে যায় । কেউ রুকু ও সিজদার মাঝে স্থির হয়ে দাড়ায় না । হাফ দাড়িয়ে সিজদায় জায়।
মহানবি (সাঃ) বলেন, হে মুসলিম দল সে ব্যাক্তির নামায হয় না ,যে ব্যাক্তি রুকু ও সিজদাতে নিজ পিঠ সোজা করে না ।( সহিহ তারগিবঃ৫২৪)
আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দার নামাযের দিকে তাকিয়েও দেখেন না ,যে রুকু ও সিজদার মাঝে নিজ পিঠকে সোজা করে দাঁড়ায় না (সিলসিলাহ সহিহাহঃ ২৫৩৬)
মানুষ ৬০ বছর ধরে নামায পড়ে , অথচ তার একটি নামায ও কবুল করা হয় না কারণ ,হয়তো বা সে রুকু পূর্ণ রুপে করে কিন্তু সিজদাহ পূর্ণরুপে করে না অথবা সিজদাহ পূর্ণরুপে করে কিন্তু রুকু ঠিকভাবে করে না । (সিলসিলাহ সহিহাহঃ ২৫৩৫)
নামায ৩ ভাগে বিভক্ত ,;এক তৃতীয়াংশ পবিত্রতা , এক তৃতীয়াংশ রুকু এবং এক তৃতীয়াংশ সিজদাহ ।সুতরাং যে ব্যাক্তি তা জথারুপে আদায় করবে, তার নিকট থেকে তা কবুল করা হবে এবং তার সমস্ত ইবাদাত ও কবুল করা হবে ।আর যার নামায বাতিল করে দেওয়া হবে তার অন্য সব আমল ও বাতিল করে দেওয়া হবে।(সিলসিলাহ সহিহাহঃ ২৫৩৭)
১৪. আযান শুনেও যে নামাজি বিনা ওজরে মসজিদের জামায়াতে নামায পরে না ।তার নামায কবুল হয় না ।
মহানবী (সাঃ) বলেন,জে ব্যাক্তি আযান শোনা সত্ত্বেও মসজিদে জামায়াতে এসে নামায আদায় করে না ,কোন ওজর না থাকলে সে ব্যাক্তির নামায কবুল হয় না । ( সহিহুল জামে ঃ ৬৩০০)
১৫. এমন মহিলা যে আতর বা সেন্ট মেখে মসজিদের জন্য বের হয় । এমন মহিলা যতক্ষণ পর্যন্ত না নাপাকির গোসল করার মত গোসল করেছে ততক্ষন পর্যন্ত তার নামায কবুল করা হবে না । (সহিহুল জামেঃ ২৭০৩)
আরো পড়ুনঃ হাসির গল্প দুই ভাই | মজার গল্প | funny story|
১৬.পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের নামায কবুল হয় না । পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রুপ হতে পারে যেমন
* পিতা-মাতার উপর নিজেকে বড় মনে করা। অথ্যাত সম্পদ,শিক্ষা-দিক্ষা, সম্মান -প্রতিপত্তি ইত্যাদি বিষয়ে পিতা-মাতার চেয়ে নিজেকে বড় মনে করা । এটাই পিতা-মাতার অবাধ্যতা
* পিতা-মাতাকে সহায় -সম্বলহীন ও নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা এবং যার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হয়। আর এটায় পিতা-মাতার অবাধ্যতা ।
* বন্ধু -বান্ধব, স্ত্রী -সন্তান , বা অন্য কাউকে ,এমনকি নিজের প্রয়োজনকেও পিতা -মাতার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া তাদের অবাধ্যতার অন্তর্ভুক্ত ।
* পিতা-মাতাকে শুধু নাম ধরে বা এমন শব্দ প্রয়োগে দাকা যা তাদের অসম্মান ও মর্যাদাহানির ইঙ্গিত দেয় ।এটায় পিতা -মাতার অবাধ্যতা।
* পিতা মাতার সঙ্গে চোখ রাঙিয়ে ধমকের সাথে কথা বলা । এটাও পিতা মাতার প্রতি অবাধ্যতা।
* তাদের সেবা না করা এবং শারীরিক ও মানসিক বিষ্যের দিকে খেয়াল না রাখা । বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে রোগ ব্যধিতে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা। এটাও পিতা-মাতার অবাধ্যতা
উপযুক্ত ব্যাক্তি বর্গের কোন ফরজ-নফল নামায ইবাদতই (অথবা তওবা ও মুক্তিপণ ) কবুল করা হবে না । মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকইকে সকল প্রকার গুনাহ থেকে হেফাজত করুন এবং আমাদের নামাজকে কবুল করুন ।আমিন।
Comments
Post a Comment