এই ৫ শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে আল্লাহ্ সবসময় থাকেন!!
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ, Extraordianary এর পক্ষ থেকে আপনাদের স্বাগতম। আজকে আমরা জানতে চলেছি কোন ৫ শ্রেণির লোকের সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা সবসময় থাকেন ? চলুন শুরু করা যাক;
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জেনে রেখো যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চাই ,তবু তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনও তোমার উপকার করতে পারবে না। আর যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় ,তবু তারা আল্লাহর নিধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনও তোমার ক্ষতি করতে পারবে না।কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং দপ্তরসমুহ শুকিয়ে গেছে। (সুনানে তিরমিজি ঃ ২৫১৬)
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর ৫০টি উপদেশ আপনাকে জ্ঞানী করে দিবে!!
আলোচ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিন্দের আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভে উৎসাহিত করেছেন। যেন তারা ঈমান , ইখলাস, ইবাদাত ও আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা ,সান্নিধ্য ও রহমতের দৃষ্টি লাভে সক্ষম হয় । পার্থিব জিবনে তারা কখনো আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত না হয়।
আল্লাহ সঙ্গে থাকার অর্থ ঃ সঙ্গ বা সঙ্গে থাকা বোঝাতে আরবি ভাষায় মায়িয়্যাত শব্দ ব্যাবহার করা হয়। আহ্লুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিশ্বাস অনুযায়ী মায়িয়্যাত মহান আল্লাহর একটি গুন। তবে আল্লাহর সঙ্গে থাকা কোন সৃষ্টির সঙ্গে থাকার মতো নয়।
কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, কোন কিছুই তার মতো নয় ,তিনি সব শোনেন এবং দেখেন। ( সূরা আশ-শুরা ঃ ১১)
বিশেষজ্ঞ আলেম্রা আল্লাহর সঙ্গে থাকার দুটি অর্থ করেন ;
১. সাধারণ অর্থে আল্লাহর সঙ্গে থাকাঃ তাহলো আল্লাহ তার জ্ঞান প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার মাধ্যমে সব সৃষ্টির সঙ্গে থাকেন।
২. বিশেষ অর্থে সঙ্গে থাকাঃ আর তা হলো সতর্কীকরণ ,সাহায্য ,সহজোগিতা ও সুযোগ দানের মাধ্যমে সঙ্গে থাকেন। কোরআন ও হাদিসের ভাস্য অনুযায়ী আল্লাহ নবী- রাসুল ,মুমিন ও তার নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাদের সঙ্গে দয়া অনুগ্রহ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সঙ্গে থাকেন । ওহি ও ইলহামের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করেন।
আল্লাহ যাদের সঙ্গে থাকেনঃ পবিত্র কোরআনের আকাধিক আয়াতে ৫ শ্রেণির মানুষের সঙ্গে আল্লাহর থাকার বিষয়টি বিবৃত হয়েছে। যেমন;
১. আল্লাহ ভীরু ও দয়াশীল মানুষের সঙ্গেঃ আল্লাহ মুত্তাকি ও দয়াশীল মানুষের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেন, নিশ্চই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা আল্লাহ ভীরু ও অনুগ্রহকারী। ( সূরা নাহলঃ১২৮)
২. আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের সঙ্গেঃ যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আহবান করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। আল্লাহর মহান দুই নবী মুসা ও হারুন (আ. )কে ফেরাউনের কাছে দ্বীনি দাওয়াত নিয়ে জাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন;
তোমরা ভয় পেয়ো না ,নিশ্চই আমি তোমাদের সঙ্গে আছি ,আমি শুনি ও দেখি ।( সূরা তাহাঃ ৪৬)
৩. বিপদগ্রস্ত মুমিনের সঙ্গেঃ যখন কোন মুমিন বিপদগ্রস্ত হয় এবং তারা আল্লাহর সাহায্য কামনা করে আল্লাহ সাহায্যের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে থাকেন। ইরশাদ হয়েছে,
"যখন দুই দল পরস্পরকে দেখল, মুসার অনুসারীরা বলল, নিশ্চই আমরা ধরা পরে জাবো ।মুসা (আ.) বললেন , কখনই না ।নিশ্চয় আমার প্রভু আমার সঙ্গে আছেন।তিনি আমাকে পথ দেখাবেন ।" (সূরা আশ -শুরাঃ ৬২)
৪. আল্লাহর পথে হিজরতকারী মানুষের সঙ্গেঃ আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করছিলেন ,তখন আবু বকর (রা.) শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন- সে সময় সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে ,
"যখন তারা গুহায় ছিল, তখন সে তার সঙ্গিকে বলেছিল বিষন্ন হয়ো না । আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। "(সূরা তাওবাঃ ৪০)
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ১০০টি ইসলামিক নাম ও তার বাংলা অর্থ. Meyeder Islamic Name
৫. ধৈর্য শীল ব্যাক্তিদের সঙ্গেঃ যারা দ্বীনের ওপর চলতে গিয়ে বিপদের শিকার হয় এবং ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
" হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও ।নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্য শীলদের সঙ্গে আছেন। " (সূরা বাকারাঃ১৫৩)
আল্লাহকে সঙ্গে পেতে হলে আল্লাহকে যথাযথ ভাবে ভয় করতে হবে। জিবনের সর্বত্র তার বিধিবিধান যথাযথ ভাবে পালন করতে এবং তার সৃষ্টির সঙ্গে বিনম্র আচরণ করতে হবে ।আর কখনো আল্লাহ বিপদ আপদ দ্বারা পরীক্ষা নিলে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ পবত্র কোরআনে ইরশাদ করেন ,
"নিশ্চই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন যারা আল্লাহ ভীরু ও অনুগ্রহকারী । "(সূরা নাহলঃ ১২৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
'যে ব্যাক্তি তার কঠিন বিপদের সময়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হওয়ার আনন্দ পেটে চায় সে যেন তার সচ্ছলতার সময় বেশি বেশি দোয়া করে।' ( সুনানে তিরমিজিঃ ৩৩৮২)
হযরত কাতাদাহ রহ. বলেন, 'যে ব্যাক্তি আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার সঙ্গী হবেন ,জার সঙ্গী আল্লাহ হবেন, তার সঙ্গী এমন একটি দল হবে যাদের পরাজিত করা যায় না (ফেরেশতা) ,এমন পাহারাদার হবেন জিনি ঘুমান না এবং এমন পথপ্রদশক হবেন জিনি কখনো পথভ্রষ্ট হন না।' ( জামিউল উলুম ওয়াল হিকামঃ ২০/১৪)
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে উক্ত গুনে গুনন্নিত হবার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Comments
Post a Comment